অঞ্চলভেদে বাণিজ্যিক কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

অঞ্চলভেদে বাণিজ্যিক কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো | বাণিজ্যিক কৃষির বৈশিষ্ট্য কী কী?
Photo of author
Bishal Roy

Published On:

অঞ্চলভেদে বাণিজ্যিক কৃষির বৈশিষ্ট্যসমূহ: যে কৃষিব্যবস্থায় কৃষিজ দ্রব্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে উৎপন্ন করা হয়, তাকে বাণিজ্যিক কৃষি বলে। জলবায়ু এবং জনসংখ্যা-জমির অনুপাত-প্রধানত এই দুই নিয়ন্ত্রকের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর দুটি অঞ্চলে দু ধরনের বাণিজ্যিক কৃষি প্রণালী গড়ে উঠেছে। যথা-

মধ্য অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল:

মধ্য অক্ষাংশের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্গত তৃণভূমি অঞ্চলে যেখানে জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ নেই সেখানে ব্যাপক কৃষি পদ্ধতিতে মূলত গম এবং ভুট্টা চাষ হয়। একে বাণিজ্যিক দানাশস্য চাষও বলা হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এই কৃষিব্যবস্থা দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • কৃষি জোতগুলি বৃহদায়তন, জোতগুলি 500-1000 হেক্টর হয়।
  • কৃষিকাজ মূলত যন্ত্রনির্ভর। ভারী যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর, হারভেস্টর, থ্রেসার ইত্যাদির ব্যবহার করা হয়। কায়িক শ্রমের ব্যবহার কম।
  • শস্যের বিশেষীকরণ দেখা যায়। জমিতে দানাশস্য হিসেবে প্রধানত গম ও ভুট্টা চাষ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বার্লি, ওট, রাই, সয়াবিনের চাষ হয়।
  • মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেশি। উৎপাদিত ফসলের সামান্য অংশ খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। বেশির ভাগ ফসল রপ্তানি করা হয়।
  • কৃষি খামারগুলি তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও বেতার সংযোগ, পণ্য পরিবহণের নিজস্ব যান ব্যবহার প্রভৃতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিক্ষেত্রগুলির সঙ্গে নিকটবর্তী বন্দরের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।

নিম্ন অক্ষাংশের ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চল:

নিম্ন অক্ষাংশের ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে পর্বতের ঢালে এবং সমতল ভূভাগে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাগিচা কৃষি পদ্ধতিতে চা, কফি, কোকো, রবার, ইক্ষু, কলা প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করা হয়। পেরু, ব্রাজিল, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, কিউবা, মেক্সিকো, ঘানা, নাইজেরিয়া, তারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস্ প্রভৃতি দেশে বাগিচা কৃষি প্রচলিত আছে।

এটিও পড়ুন :  ভারতে ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, ভারতে ধান উৎপাদনে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা আলোচনা করো।

বৈশিষ্ট্য

  • কৃষিকাজ প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক উপাদানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শস্যের ফলন, গুণমান এবং কৃষকের কাজের দক্ষতা জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে।
  • বাগিচাগুলি আকারে বৃহদায়তন হয়। এক-একটি বাগিচার বিস্তৃতি কমপক্ষে 100 হেক্টর হয়।
  • কৃষিকাজের জন্য হস্তচালিত ছোটো ছোটো যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। সেই সঙ্গে চারাগাছের রক্ষণাবেক্ষণ, ফসল তোলা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
  • পরিকাঠামোগত উন্নতি, প্রশাসনিক কর্মী ও শ্রমিকদের বসবাসের ব্যবস্থা, কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের জন্য প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। মূলত বিদেশি পুঁজির সহায়তায় এই কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
  • কঠোরভাবে শস্য বিশেষীকরণ অনুসরণ করা হয়। একটি বাগিচাতে কেবল একটিমাত্র বাণিজ্যিক তথা অর্থকরী শস্যের চাষ হয়।
  • বাগিচা ক্ষেত্রগুলি উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দরের সঙ্গে বা নিকটবর্তী রপ্তানি কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। অধিকাংশ বাজার বাইরে হওয়ায় উৎপাদিত দ্রব্য সমুদ্রপথে রপ্তানি হয়।