ভারতে বাজরা উৎপাদন সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতে বাজরা উৎপাদন সম্বন্ধে আলোচনা করো।
Photo of author
Bishal Roy

Published On:

ভারতে বাজরা উৎপাদন: ভারতের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে শস্য উৎপাদন সর্বদাই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ধান, গম, ডাল ও ভুট্টার পাশাপাশি বাজরা (Millets) আজ পুনরায় গুরুত্ব পাচ্ছে তার পুষ্টিগুণ, আবহাওয়া সহনশীলতা ও স্বল্প সেচ প্রয়োজনীয়তার কারণে। একসময় গ্রামীণ ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে বাজরার ছিল বিশেষ স্থান, কিন্তু আধুনিককালে ধান-গমের আধিপত্যে এর ব্যবহার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল। সাম্প্রতিককালে সরকার ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা “শ্রীঅন্ন” নামে বাজরাকে আবার আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ভারতে বাজরার উৎপাদনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালেরও আগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজরার চাষ শুরু হয়েছিল। বিশেষত, দক্ষিণ ভারত ও রাজস্থান অঞ্চলে এই শস্যের বিস্তার ঘটে কারণ সেসব অঞ্চলে ধান বা গমের মতো শস্য উৎপাদন করা কঠিন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে বাজরা গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো, কারণ এটি সহজলভ্য, পুষ্টিকর ও সস্তা। তবে সবুজ বিপ্লবের সময় (১৯৬০-৭০ দশক) ধান ও গমের উপর সরকারি জোর বাড়ার ফলে বাজরা ধীরে ধীরে প্রান্তিক শস্যে পরিণত হয়। বর্তমানে আবার বাজরার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে, যা প্রমাণ করে ভারতের খাদ্য সংস্কৃতিতে এই শস্যের গভীর ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে।

ভৌগোলিক বিস্তার ও উৎপাদনের ধরণ: ভারতে বাজরা মূলত শুষ্ক ও অল্প বৃষ্টিপাতপ্রবণ অঞ্চলে বেশি চাষ হয়। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট বাজরা উৎপাদনের প্রধান রাজ্য। রাজস্থানকে বাজরার “হটস্পট” বলা হয়, কারণ এখানকার মরুভূমি ও অর্ধশুষ্ক মাটিতে এটি ভালো জন্মায়। এছাড়াও কর্ণাটকে রাগি বা নাচনী চাষ ব্যাপকভাবে হয়। ভারতে বাজরার চাষ সাধারণত বর্ষাকালে (খরিফ মৌসুমে) হয়, কারণ এটি কম পানিতে টিকে থাকতে সক্ষম।

এটিও পড়ুন :  বিভিন্ন প্রকার কৃষি প্রণালীর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

ভৌগোলিক অবস্থা: দাক্ষিণাত্যে বাজরাকে কুম্ভ (Cumbu) বলে। ক্ষুদ্র দানাশস্য হিসেবে জোয়ারের পরই বাজরার গুরুত্ব এবং জোয়ারের মতো এটিও কষ্টসহিষ্ণু ফসল। যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত 30 থেকে 50 সেন্টিমিটার এবং তাও অনিশ্চিত সেখানে বাজরার চাষ হয়। উত্তাপ গড়ে 26 সেলসিয়াস থেকে 33 °সেলসিয়াস এবং মাটিতে বালির ভাগ বেশি- এমন সব স্থানে বাজরার চাষ বেশি হয়।

উৎপাদনের পরিমাণ এবং উৎপাদক অঞ্চল: 2011-12 খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রায় ৪6 লক্ষ হেক্টর কৃষিজমিতে বাজরা চাষ করা হয় এবং ওই বছর প্রায় 100 লক্ষ টন বাজরা উৎপন্ন হয়। ভারতে হেক্টর প্রতি বাজরা উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় 1,156 কেজি।

ভারতে বাজরা উৎপাদক রাজ্য ও জেলা

(১) রাজস্থান: যোধপুর, বারমের, বিকানীর, গঙ্গানগর, আলোয়াড়, জয়শলমীর প্রভৃতি। শীর্ষস্থানাধিকারী রাজ্য। 50 লক্ষ হেক্টর জমিতে 41.6 লক্ষ টন বাজরা উৎপাদিত হয়।

(২) উত্তরপ্রদেশ: আগ্রা, মোরাদাবাদ, আলিগড়, বাধৌন প্রভৃতি। বাজরা উৎপাদনে এই রাজ্যের স্থান দ্বিতীয়। 8.9 লক্ষ হেক্টর জমিতে 16.3 লক্ষ টন বাজরা উৎপাদিত হয়।

(৩) গুজরাত: কচ্ছ, মেহানা, ভাবনগর, সুরেন্দ্রনগর, জামনগর, রাজকোট, জুনাগড় প্রভৃতি। বাজরা উৎপাদনে এই রাজ্যের স্থান তৃতীয়। ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে 14.2 লক্ষ টন বাজরা উৎপাদিত হয়।

(৪) অন্যান্য: হরিয়ানা (হিসার, গুরগাঁও, মহেন্দ্রগড়), মহারাষ্ট্র (নাসিক, সাতারা, পুনে, শোলাপুর, আহমেদনগর), মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক (রায়চূড়, চিত্রদুর্গ, বেল্লারি), তামিলনাড়ু প্রভৃতি। হেক্টর প্রতি বাজরা উৎপাদনে তামিলনাড়ু (2,148 কেজি) ভারতে প্রথম স্থান লাভ করে।