ভারতে রাগি উৎপাদন সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ভারতে রাগি উৎপাদন সম্বন্ধে আলোচনা করো।
Photo of author
Bishal Roy

Published On:

ভারতে রাগি উৎপাদন: ভারত প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধরণের শস্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ। ধান, গম, ভুট্টা প্রভৃতি প্রধান খাদ্যশস্যের পাশাপাশি রাগি বা ‘ফিঙ্গার মিলেট’ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। রাগি একটি ক্ষুদ্রশস্য হলেও এর পুষ্টিগুণ, কৃষি-সহনশীলতা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান অনস্বীকার্য। ভারতে রাগির ব্যবহার শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, বরং দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে পুষ্টিহীনতা দূর করার হাতিয়ার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক কৃষি নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস এবং প্রযুক্তির বিকাশের ফলে রাগি উৎপাদন ও ব্যবহারের ধারা নতুনভাবে বিবেচিত হচ্ছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ভারতে রাগি উৎপাদনের ইতিহাস বহু প্রাচীন। গবেষণা বলছে যে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে রাগির উৎপত্তি হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশে বহু শতাব্দী আগে প্রবেশ করেছে। প্রাচীন কৃষি প্রথায় রাগি ছিল গ্রামীণ কৃষকদের অন্যতম ভরসা। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে রাগি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে স্থানীয় খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। মধ্যযুগীয় শিলালিপি ও সাহিত্যে রাগি চাষের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে এর গুরুত্ব কেবল খাদ্যে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গভীর। এ সময় রাগিকে “দরিদ্র মানুষের শস্য” বলা হলেও বাস্তবে এটি কৃষকদের জন্য ছিল টেকসই জীবিকার মাধ্যম।

ভৌগোলিক বিস্তার: ভারতে রাগি মূলত দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের রাজ্যগুলোতে বেশি চাষ হয়। কর্ণাটক রাগি উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়, যেখানে দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ সরবরাহ হয়। এছাড়াও তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড এবং হিমালয়ের কিছু অঞ্চলেও রাগি চাষ হয়। রাগি চাষের জন্য যে ধরনের জলবায়ু প্রয়োজন তা হলো কম বৃষ্টিপাত, অনাবৃষ্টি সহনশীলতা এবং মাঝারি উষ্ণতা। পাহাড়ি এলাকায়ও রাগির ভালো ফলন হয়, কারণ এটি ঠান্ডা সহনশীল। রাগি এমন এক শস্য যা অনুর্বর ও অনাবৃষ্টিপ্রবণ জমিতেও উৎপাদন করা সম্ভব। তাই এটি ভারতের কৃষি-বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এটিও পড়ুন :  সম্পদ সৃষ্টির উপাদানসমূহ – Resource Creating Factors

ভৌগোলিক অবস্থা: রাগির অন্য নাম মারুয়া। জোয়ার ও বাজরার মতো রাগিও কষ্টসহিয়ু ফসল এবং অনুবর শুষ্ক অঞ্চলেই এর চাষ হয়। উত্তাপ গড়ে 25° থেকে 32 °সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত গড়ে 40 থেকে 60 সেন্টিমিটার হলে রাগির চাষ করা যায়। তবে কিছুদিন অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি হলেও রাগির উৎপাদন খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সাধারণত লাল কাঁকুরে মাটিতে রাগির চাষ করা হয়।

উৎপাদনের পরিমাণ ও উৎপাদক অঞ্চল: 2011-12 খ্রিস্টাব্দে ভারতের 14.22 লক্ষ হেক্টর কৃষিজমিতে রাগি চাষ করা হয় এবং রাগি উৎপাদিত হয় প্রায় 28.31 লক্ষ টন।

ভারতে রাগি উৎপাদক রাজ্য ও জেলা

(১) কর্ণাটক: কোলার, বেঙ্গালুরু, তুমকুর, হাসান, মাইসোর প্রভৃতি। ভারতের শীর্ষস্থানাধিকারী রাজ্য। 7.6 লক্ষ হেক্টর জমিতে প্রায় 14.3 লক্ষ টন রাগি উৎপাদিত হয়।

(২) তামিলনাড়ু: কোয়েম্বাটোর, ধর্মপুরি, সালেম, উত্তর ও দক্ষিণ আর্কট, মাদুরাই প্রভৃতি। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী রাজ্য। 1.44 লক্ষ হেক্টর জমিতে 3.05 লক্ষ টন রাগি উৎপাদিত হয়।

(৩) অবিভক্ত অপ্রদেশ: প্রকাশম, বিশাখাপত্তনম, অনন্তপুর, চিতুর প্রভৃতি। রাগি উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থান লাভ করেছে (2.15 লক্ষ টন)।

(৪) অন্যান্য: মহারাষ্ট্র (রত্নগিরি, থানে) বিহার, উত্তরাখণ্ড প্রভৃতি। মহারাষ্ট্র রাগি উৎপাদনে ভারতে চতুর্থ স্থান লাভ করেছে।