বাংলার উৎসব রচনা | banglar utsav rochona | বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা pdf

বাংলার উৎসব রচনা 400 শব্দের প্রবন্ধ | বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা pdf | Banglar Utsav Rachana | বাংলার উৎসব রচনা

বাংলার উৎসব রচনা | banglar utsav rochona | বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা pdf

Dharona Desk: আজকের পোস্টে বাংলার উৎসব সংক্রান্ত দুটি প্রবন্ধ রচনা এখানে দেওয়া হল, যেগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে, অতএব সময় নষ্ট না করে ঝটপট দেখে নাও আথবা সংগ্রহ করে নাও।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ—এই প্রবাদটি বাঙালির উৎসবপ্রিয়তাকে প্রমাণ করে। বাঙালির উৎসবগুলি মূলত ধর্মীয়, জাতীয়, সামাজিক, এবং ঋতুগত উৎসব হিসেবে ভাগ করা যায়। পারিবারিক অনুষ্ঠানও এখানে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। ধর্মের সাথে লৌকিকতা, সামাজিকতা এবং আধুনিক জীবনের নানা দিক উৎসবের মাধ্যমে বাঙালির জীবনে মিশে গেছে। যেমন পয়লা বৈশাখের হালখাতা যেমন বাঙালির ব্যবসায়িক জীবনের একটি বিশেষ অংশ, তেমনই সরস্বতী পূজা শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যার আরাধনা।

বাংলার উৎসব

ভূমিকাঃ বাঙালি উৎসব প্রিয়। বারো মাসে তের পার্বণ লেগেই আছে বাঙালির ঘরে ঘরে। বাংলার এই উৎসবগুলির আদি উৎস গ্রাম। প্রাচীন বাংলায় সমাজ জীবন ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। জীবনের ধর্মবোধ, অর্থনৈতিক পরিবেশ, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি বাসনাকামনা পূরণের অনুষ্ঠান হল বাঙালির উৎসবগুলি। তবে বেশিরভাগ উৎসবই ধর্মবোধকেন্দ্রিক। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উৎসবগুলি উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই এই উৎসব-অনুষ্ঠানের অংশীদার। এর মূল প্রেরণা ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন, পারস্পরিক সহানুভূতির মধুর আকর্ষণ এই সামাজিক উৎসবগুলি বাঙালির একঘেয়ে জীবনে যেমন দিয়েছে বৈচিত্র্যের আনন্দ, তেমনি ঐগুলির মাধ্যমে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতামুক্ত বাঙালি নিজের চেতনাবোধকে ছড়িয়ে দিয়েছে বৃহত্তর কল্যাণকর কাজে। কোন না কোন উপলক্ষ্যে উৎসবের ভিতর দিয়ে সে নিজের সমাজ সত্তাকে মৈত্রী ও মঙ্গলের মধ্যে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন-বাঙলার সামাজিক উৎসবের এটাই তাৎপর্য।

শারদীয়া পূজা: বাঙালির সামাজিক জীবনে উৎসবের শ্রেষ্ঠ পূজা শারদীয়া পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যজ্ঞের অনুকল্প হিসাবে পঞ্চদশ কি ষোড়ষ শতকে উত্তরবঙ্গের তাহেরপুরের হিন্দুরাজা কংসনারায়ণ এই পূজার প্রবর্তন করেছিলেন। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সর্বস্তরের হিন্দু বাঙালিই প্রাত্যহিক জীবনের দুঃখবেদনা ভুলে উৎসবের কয়েকটা দিন আনন্দ মেতে ওঠে। বাঙালি স্বভাবে শান্ত তাই শক্তিপূজার প্রতি তার আকর্ষণ স্বাভাবিক। দশপ্রহরণধারিণী দুর্গা সেই শক্তির প্রতীক, পাশবশক্তি সেই পরমাশক্তির আজ্ঞাবহ বহ্নি।

লক্ষ্মী পূজা: দূর্গাপূজার অব্যবহিত পরেই আসে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা। লক্ষ্মী সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙলার কল্যাণী মা ও মেয়েদের হাতের বিচিত্র আলপনা চিত্রিত হয়। যা বাঙলার সংস্কৃতি ও ললিত কলার পরিচয়বাহী।

কালীপূজা: লক্ষ্মীপূজার পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় কালীপূজা,যাঁর আরাধনায় তামসী রাত্রিকে আমরা নানা আলোয় উজ্জ্বল করে তুলি। এ শুধু নিসর্গের অন্ধকার অপনোদন নয়, প্রজ্ঞার আলোকে অন্তরলোকের জাগরণও বটে। কার্ত্তিক পূজাঃ এরপর কার্তিক মাসে সন্তানের কামনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কার্ত্তিক পূজা। মানুষ তার সন্তানের মধ্যে দিয়ে জগতে নিজের চিহ্ন বজায় রেখে যেতে চায়। তাই সন্তান লাভ ও সন্তানের সুখসমৃদ্ধির জন্য এই কার্তিকের আবাহন।

দোল উৎসব: বাঙালির উল্লেখযোগ্য উৎসব হল দোল। বসন্তকালে প্রকৃতিতে যখন ফুল ও ফলের সমারোহ মানুষের মনেও তখন দখিনা বাতাসের হাওয়া লাগে। এই দোল উৎসব যৌবনের মুক্তলীলা উৎসব। যৌবনের রঙ লাল-এই রঙের সঙ্গেই বৈয়বধর্মের রাধাকৃষ্ণ লীলা মিলেমিশে আধ্যাত্মরোগে রঞ্জিত হয়েছে।

এছাড়াও আছে বর্ষার রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, মনসাপূজা, ভাদ্রমাসে জন্মষ্টামী ও - বিশ্বকর্মা পূজা, হেমন্তে জগদ্ধাত্রী পূজা ও রাসযাত্রা, বসন্তে শিবচতুর্দশী ও চড়ক গাজন ধর্মীয় উৎসব। কালীপূজার পরে হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ও নবান্ন উৎসব। পৌষ সংক্রান্তির পৌষ পার্বণ প্রকারান্তরে পৌষলক্ষ্মীর উৎসব।

বাংলার ব্রত উৎসব যদিও বাংলার সামাজিক উৎসবের পর্যায়ভুক্ত। এগুলি প্রধানত নারীকেন্দ্রিক, পুণ্যিপুকুর ব্রত, ভাদু উৎসব, ইতুপূজা, বসুধারা ব্রত, মাঘমন্ডল ইত্যাদিকে ঘিরে বাংলার সংস্কৃতির নানারূপই প্রকাশ পেয়েছে।

বাঙালি সমাজের অন্যান্য জাতিদের উৎসবের অংশগ্রহণ করে। বৌদ্ধদের বৃদ্ধ-পূর্ণিমার উৎসব, জৈনদের পরেশনাথ উৎসব, মুসলমানদের ইদ, মহরম, ঈদ-উল-ফিতর, খ্রীষ্টানদের বড়দিন ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: চন্দ্রযান ৩ প্রবন্ধ রচনা PDF

বিংশ শতাব্দীর উত্তরার্ধে মানুষের গতিবৃদ্ধি হয়েছে। মানুষ এখন সর্বদাই কাজে এত ব্যস্ত যে অনেক ক্ষেত্রে উৎসবগুলি প্রাণ হারিয়েছে। মানুষের মনে কুসংস্কার যেমন দূর হয়েছে তেমনি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগে মানুষের মন থেকে অলৌকিকতা অনেকক্ষেত্রেই দূরীভূত হয়েছে। সেজন্য অনেক উৎসবই এখন ম্লান হয়ে গেছে। তবুও সামাজিক উৎসবে মানুষের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড়কথা। উৎসবগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে প্রীতি, মৈত্রী, আনন্দের বিকাশ সাধিত হোক, এতে যদি অলৌকিক অধ্যাত্ম মহিমা ক্ষুণ্ণ হয়, লৌকিক সমাজের তাতে লাভ বই লোকসান নেই।

উৎসবের লক্ষ্য

নির্ভেজাল আনন্দলাভের জন্য যে পবিত্র অনুষ্ঠানের আঙিনায় আবালবৃদ্ধবণিতার উল্লসিত সমাবেশ ঘটে তারই নাম উৎসব। উৎসবে আনন্দ থাকবে, উচ্ছ্বাস থাকবে-কিন্তু তা সব সময়েই সংযম ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া উচিত। প্রতি উৎসবের একটা নিগূঢ় লক্ষ থাকা উচিত নয়ত উৎসব প্রাণহীন হয়ে পড়ে।

উৎসবের কারণ

মানুষ একার জন্য বাঁচে না। বা শুধুমাত্র গ্রাসাচ্ছাদনই মানুষের মূল লক্ষ্য নয়। উদরপূর্তির সঙ্গে সঙ্গে মানসপূর্তিরও নানা পন্থা অবলম্বন করতে হয়। উৎসব হল মানুষের সেই মানসপূর্তির এক বিশেষ পন্থা। শতাব্দী প্রাচীন থেকেই আমাদের দেশে যেকোন ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক উৎসবে গ্রামবাসী, আত্মীয় স্বজন সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হত। সকলেই সেই উৎসবে হার্দিকভাবে যোগদান করতেন, অংশগ্রহণ করতেন। উৎসবের অর্থনৈতিক দায়ভারও নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন। সুষ্ঠু ভাবে উৎসব সম্পাদনার জন্য কারোর চেষ্টার ত্রুটি থাকত না।

প্রাচীনকালে উৎসব

উৎসব গুলি বেশিরভাগ সামাজিক উৎসব, কারণ উচ্চ-নীচ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজের সব লোকই উৎসবের অংশীদার। উৎসবের মূল প্রেরণা ছিল ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন। পারস্পরিক সহানুভূতির মধুর আকর্ষণ। উৎসব একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র্য যেমন আনে, তেমনি সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতাকে দূরে সরিয়ে রেখে নতুন চেতনাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠতে পারে। বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 'আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভে সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি-এই কল্যাণ ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।'

আধুনিক জীবনে উৎসব

তবে আধুনিক জীবনে গতিময়তা ও ব্যস্ততার কারণে উৎসবের আন্তরিকতার অনেকখানি ভাটা পড়েছে। ধনীর চণ্ডীমণ্ডপের জায়গায় এসেছে সর্বজনীন পূজামণ্ডপ। পূজো এখন হুজুগের ফ্যাশান মাত্র। চাঁদা তুলে এখনো পূজা হয় ঠিকই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই চাঁদা আদায় করা হয় জোর জুলুমের ভিত্তিতে। উদ্যোক্তারা সঠিক হিসাবপত্রও দেন না জনগণকে। পরের পয়সা দুহাতে ওড়াতে এদের উল্লাসে জোয়ার জাগে। অর্থহীন আলোকসজ্জা, উৎকট হৃদয়বিদারী গানের চিৎকারে কানাপাতা দায়। সংলগ্ন এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ হন, বয়স্করা যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত হন।

আরও পড়ুন: র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

উৎসবের আধ্যাত্মিকতা বর্তমানে মানুষের চটুলতার কাছে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। হার্দিক ব্যাপারটা লোক দেখানোয় পর্যবসিত হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে এই ঘটনা বেশীর ভাগ জায়গায় ঘটলেও কোনো কোনো জায়গায় সেই সাবেকিয়ানা বজায় আছে।

উপসংহার: তবে উৎসবে আনন্দ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এর একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত। চাঁদার বেশ খানিকটা অংশ গরীব দুঃখীদের দানসামগ্রীতে কাজে লাগানো দরকার। সেখানে রক্তদান শিবির, চক্ষু পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরও চলতে পারে। তাহলেই উৎসবের দীপ্তির পাশাপাশি হৃদয়দেবতা আরো দীপ্ত হয়ে উঠবেন। সমাজ আরো বেশি করে আলোকিত হয়ে উঠবে। রাতের জলসায় হাজার হাজার টাকা না উড়িয়ে বই কেনা, গ্রন্থাগারে দান করলে উৎসব আরো প্রাণময় হয়ে উঠবে।-আর এখানেই উৎসবের অপচয় গুলি রোধ করে সার্থকমন্ডিত হয়ে উঠবে।

Post a Comment