মাধ্যমিকের পর কী করবেন? সাইন্স, আর্টস নাকি কমার্স - সম্পূর্ণ গাইড | Career After 10th Madhyamik
Career After 10th Madhyamik: মাধ্যমিক পরীক্ষার পর, ছাত্রছাত্রীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে, যেখানে তাদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সঠিক বিভাগ নির্বাচন করতে হয়। সায়েন্স, আর্টস, এবং কমার্স—এই তিনটি প্রধান বিভাগের মধ্যে সঠিকটি বেছে নেওয়া ভবিষ্যতের কেরিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকের প্রতিবেদনে, আমরা এই তিনটি বিভাগের ভবিষ্যত সম্ভাবনা, চাকরির সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
কোন একটি স্ট্রিম বেছে নেওয়ার আগে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং ভবিষ্যত এর কথা মাথায় রেখে কি কি চাকরির সুযোগ আছে আগের থেকে জানা থাকলে, নিজের কেরিয়ার গঠনে অনেক সহায়তা মেলে। টাই আজকের প্রতিবেদনে সমস্থ কিছু বিস্তারে তোমাদের সাথে তুলে ধরা হল।
মাধ্যমিকের পর কী নিয়ে পড়ব | সাইন্স, আর্টস নাকি কমার্স
মাধ্যমিকের পর কি নিয়ে পড়ব? এটি একটি Universal প্রশ্ন, যা এখন সব ছাত্র-ছাত্রীদের মনে চলছে। তবে বলে রাখি, সব স্ট্রিম এর মধ্যে তার নির্দিষ্ট ভবিষ্যত গড়ার পথ রয়েছে এবং নির্দিষ্ট বেশ কিছু চাকরির সুযোগ রয়েছে।
আর্টস বিভাগ | Arts Stream
মাধ্যমিক পাশের পর এখন অনেকাংশে শিক্ষার্থীরা আর্টস বিভাগকে বেছে নিচ্ছে। এই বিভাগে পড়লে অনেক বিষয় এর অপশন পাওয়া যায় এবং এই বিভিগে পরে অনেক শিক্ষার্থী খুব ভালো ভাবে নিজের কেরিয়ার গঠন করছে। এছাড়াও যারা আর্টস বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করে তারা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করে বিভিন্ন সরকারি চাকরি করছে এবং অনেক শিক্ষক হয়ে উঠছে।
আপনার যদি মূলত শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকে এবং কোন এক সরকারি চাকরি পাওয়ার আসা থাকে তবে আপনি আর্টস বিভাগ বেছে নিতে পারেন।
বিষয়বস্তু: আর্টস বিভাগে প্রধানত ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, এবং অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিছু স্কুলে মনোবিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, এবং পরিবেশবিদ্যার মতো বিষয়ও পাওয়া যায়।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা বা চাকরির সুযোগ: আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করলে বিভিন্ন পেশার সুযোগ পাওয়া যায়, যেমন:
- আইন: আইনজীবী, বিচারক।
- শিক্ষা: শিক্ষক, অধ্যাপক।
- সিভিল সার্ভিস: আইএএস, আইপিএস, ডব্লিউবিসিএস ইত্যাদি।
- সাংবাদিকতা: সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদ উপস্থাপক।
- সৃজনশীল ক্ষেত্র: লেখক, চিত্রশিল্পী, মিউজিশিয়ান, ফটোগ্রাফার।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক পাশে কি কি সরকারি চাকরি পাওয়া যায়? বিস্তারিত জেনে নিন
সায়েন্স বিভাগ | Science Stream (PCB & PCM)
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নেওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। কারণ এটি ভবিষ্যতের বহু পেশার দরজা খুলে দেয়, বিশেষত চিকিৎসা, প্রকৌশল, গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে। তবে বিজ্ঞান বিভাগ নেওয়ার আগে এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সায়েন্স বিভাগে কী কী পড়ানো হয়?
বিজ্ঞান বিভাগে মূলত পদার্থবিদ্যা (Physics), রসায়ন (Chemistry) এবং দুটি বিকল্প বিষয়ের সমন্বয়ে দুটি বড় বিভাগ তৈরি হয়:
- PCB (Physics, Chemistry, Biology)
- PCM (Physics, Chemistry, Mathematics)
কিছু শিক্ষার্থী PCMB (Physics, Chemistry, Mathematics, Biology) অর্থাৎ উভয় বিভাগ একসাথে বেছে নেয়, তবে এটি অনেক বেশি চাপের হতে পারে এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।
PCB বিষয়বস্তু
যারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা, বায়োটেকনোলজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ বা অন্যান্য জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত ক্ষেত্রে যেতে চায়, তাদের জন্য PCB বিভাগ আদর্শ।
- Physics (পদার্থবিদ্যা)
- Chemistry (রসায়ন)
- Biology (জীববিজ্ঞান)
PCB নিয়ে পড়ার পর ক্যারিয়ারের সুযোগ
যদি আপনি PCB বিভাগ বেছে নেন, তাহলে ভবিষ্যতে নীচের ক্যারিয়ারগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- চিকিৎসা (Medicine & Healthcare)
- MBBS (Bachelor of Medicine and Bachelor of Surgery)
- BDS (Bachelor of Dental Surgery)
- BHMS (Bachelor of Homeopathic Medicine & Surgery)
- BAMS (Bachelor of Ayurvedic Medicine & Surgery)
- Physiotherapy, Nursing, Medical Lab Technology
- বায়োটেকনোলজি ও গবেষণা
- B.Sc in Biotechnology
- Microbiology, Genetics, Biochemistry
- Biomedical Engineering
- ফার্মাসিউটিক্যাল ও ক্লিনিকাল গবেষণা
- B.Pharm (Bachelor of Pharmacy)
- Clinical Research
PCM বিষয়বস্তু
যারা ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি বা অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের দিকে যেতে চায়, তাদের জন্য PCM বিভাগ সবচেয়ে উপযোগী।
- Physics (পদার্থবিদ্যা)
- Chemistry (রসায়ন)
- Mathematics (গণিত)
PCM নিয়ে পড়ার পর ক্যারিয়ারের সুযোগ
- ইঞ্জিনিয়ারিং (Engineering)
- B.Tech / BE (Bachelor of Engineering)
- Computer Science, Mechanical, Civil, Electrical, Electronics, Aerospace, Chemical Engineering ইত্যাদি।
- Aeronautical & Aerospace Engineering
- Robotics & AI (Artificial Intelligence)
- B.Tech / BE (Bachelor of Engineering)
- তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- BCA (Bachelor of Computer Applications)
- B.Sc in Data Science / Machine Learning – Big Data, AI, Data Analysis
- ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও গবেষণা
- B.Sc in Physics, Chemistry, Mathematics
- Actuarial Science
কমার্স বিভাগ | Commerce Stream
কমার্স বিভাগটি তাদের জন্য উপযুক্ত, যারা ব্যবসা, অর্থনীতি, এবং ফিনান্সের প্রতি আগ্রহী এবং কর্পোরেট জগতে ক্যারিয়ার গড়তে চান।
বিষয়বস্তু: কমার্স বিভাগে প্রধানত হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায়িক শিক্ষা, অর্থনীতি, এবং বাণিজ্যিক গণিত অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিছু স্কুলে ব্যবসায়িক আইন, পরিসংখ্যান, এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের মতো বিষয়ও পাওয়া যায়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করলে বিভিন্ন পেশার সুযোগ পাওয়া যায়, যেমন:
- চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)
- কোম্পানি সেক্রেটারি (CS)
- ব্যাংকিং
- ব্যবসা ব্যবস্থাপনা
- অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ
স্ট্রিম বেছে নেওয়ার সঠিক গাইড
এতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা বিভিন্ন স্ট্রিম সম্পর্কে এবং বিভিন্ন স্ট্রিম এর কেরিয়ার সম্ভাবনা গুলি জানলেন, কিন্তু আপনাদের মনে এখনও সংশয় রয়ে গেল কোনটি নিজের স্ট্রিম হিসাবে বেছে নিবে। এখন তোমাদের কিছু প্রশ্ন এবং ট্রিক বলে দেব যেগুলির মাধ্যমে তোমার প্রয়োজনের স্ট্রিম বেছে নিতে পারবে।
আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করো,
- তোমার কোন বিষয় বেশি ভালো লাগে বা কোন বিষয়ের ওপর আগ্রহ ?
- তুমি কি হতে চাও?
- তোমার ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?
এই প্রশ্ন গুলি নিজেকে করে তোমার নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা সম্পর্কে বুঝতে পারবে। একবার বুঝে গেলে তোমার অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে পরামর্শ নাও এবং সর্বশেষে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌছাও।
এমনটা নয় যে সাইন্স বিভাগে অনেক কেরিয়ার অপশন আছে বলে সেই স্ট্রিম নিজের জন্য বেছে নিবে, অন্য বিভাগ থেকে অনেকে পরে সফল হচ্ছে এবং এখন তো আর্টস বিভাগেও আরও নিত্য নতুন সুযোগ উঠে আসছে। যেমন -
আরও পড়ুন:
Polytechnic & ITI
মাধ্যমিক এর পর শিক্ষার্থীরা Polytechnic & ITI থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। এখন এই দুটি কোর্সে শিক্ষা গ্রহণ করলেও বিভিন্ন চাকরির সুযোগ রয়েছে।
পলিটেকনিক (Polytechnic) হল তিন বছরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা কোর্স। এই কোর্সে সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, কেমিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদি বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পলিটেকনিক কোর্সে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৫% নম্বর প্রয়োজন।
ITI (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) কোর্সগুলির মেয়াদ ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে, যা ট্রেডের উপর নির্ভর করে। আইটিআই কোর্সে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস প্রয়োজন হয়। এই কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, ফিটার, স্টেনোগ্রাফি ইত্যাদি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন: Polytechnic & ITI এর পর কোন কোন চাকরির সুযোগ রয়েছে? জেনে নিন বিস্তারিত
সবশেষে, সমস্থ শিক্ষার্থীদের আগামী শিক্ষা জীবনের অনেক শুভেচ্ছা। আসা করছি আজকের প্রতিবেদনটি পরে খুব সহজেই একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবে। পোস্ট ভালো লাগলে অবশ্যই তোমার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিবে। সর্বদা মনে রাখবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পড়াশোনার বিকল্প কিছুই নয়।