শতবর্ষে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচনা | Nirendranath Chakraborty Biography in Bengali
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধের জীবনী মূলক টপিক থেকে শতবর্ষে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রবন্ধ রচনা Class 12 এর পরীক্ষায় আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই আজ ধারণা-র এই পোস্টে সবার সাথে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জীবনী রচনাটি শেয়ার করলাম। যেটি তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে। প্রয়োজনে রচনাটি খাতায় টুকে রাখবে।
শতবর্ষে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ভূমিকা: বাংলা সাহিত্যের শিকড়ে অনেক মহৎ কবি তাঁদের রচনায় অসামান্যতা প্রকাশ করেছেন, তাদেরই মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।, তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে তাঁর সাহিত্য জগতে অসাধারণ অবদান। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছড়া, এবং বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাঙালি মননে এক গভীর ছাপ রেখেছেন। তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে মানুষের সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ এবং সামাজিক বিভিন্ন দিক। তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দে অনুভূতি এবং গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন পাওয়া যায়।
জন্ম ও শৈশব
১৯২৪ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর পিতা ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, যিনি একজন বিখ্যাত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, এবং তাঁর মাতা প্রফুল্ল নন্দিনী দেবী। নীরেন্দ্রনাথের শৈশব কেটেছে গ্রামীণ বাংলার সাদামাটা জীবনযাপনের মধ্যে অর্থাৎ পূর্ববঙ্গে তাঁর ঠাকুরদা ঠাকুরমার স্নেহে। তাঁর ছেলেবেলা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গল্পের আবেশে ভরপুর ছিল।
শিক্ষাজীবন
প্রাথমিক শিক্ষালাভের জন্য তিনি ফরিদপুরের পাঠশালায় ভর্তি হন। পরে, ঠাকুরদার মৃত্যুর পর ১৯৩০ সালে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে আসেন এবং বঙ্গবাসী স্কুলে ভর্তি হন। এরপর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক এবং বঙ্গবাসী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরবর্তীতে, সেন্ট পলস কলেজ থেকে ইতিহাসে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি শ্রীহর্ষ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে তাঁর সাংবাদিক জীবনের সূচনা করেন।
কর্মজীবন
ছাত্রকালীন সময়েই "শ্রীহর্ষ" প্রত্রিকায় সম্পাদনা করে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার প্রতি তার নিবিড় অনুরাগের সৃষ্টি। তবে 'দৈনিক প্রত্যহ' পত্রিকার মাধ্যমেই সাংবাদিকতার জগতে তাঁর হাতেখড়ি এবং 'সত্যযুগ' পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিক জীবনের শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে একে একে 'আনন্দবাজার পত্রিকা', 'আনন্দমেলা পত্রিকা', 'ভারত', 'মাতৃভূমি' এবং আরও বিভিন্ন খ্যাতনামা পত্রিকায় কাজ করা শুরু করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। তাঁর কর্মজীবন তাঁকে শুধু সাংবাদিকতার গণ্ডিতে আটকে রাখেনি; বরং একজন সৃষ্টিশীল লেখক হিসেবে তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: HS Suggestion 2025 – Letter Writing
সাহিত্যজীবন
শৈশবের গ্রামীণ অভিজ্ঞতা, দেশভাগের বেদনা, এবং কলকাতার ব্যস্ত শহুরে জীবন - এ সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাব তাঁর সাহিত্যকর্মে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাহিত্যিক জীবনের শুরু হয় কিশোর বয়সেই, ষোলো বছর বয়সে শ্রীহর্ষ পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথমদিকে তিনি ছোট ছোট কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নীল নির্জন’ ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়, যা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলে।
উল্লেখযোগ্য রচনা
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অন্যতম বিখ্যাত কবিতা উলঙ্গ রাজা, যা সামন্ততান্ত্রিক জমিদার শ্রেণীর বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিল। তাঁর অন্যান্য কবিতার মধ্যে ‘অন্ধকার বারান্দা,’ ‘নিরক্ত করবি,’ এবং ‘উলঙ্গ রাজা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কবিতার মাধ্যমে তিনি একাধারে প্রেম, প্রতিবাদ, এবং মানবতার বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তুলেছেন।
শিশু সাহিত্য ও ছড়া রচনা
ছোটদের জন্যও তিনি অসংখ্য ছড়া ও কবিতা রচনা করেছেন, যার মধ্যে ‘বিবি,’ ‘ভোরের পাখি,’ ‘খোকনের খাতা,’ ‘ছেলেবেলা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সহজ ভাষায় রচিত এইসব ছড়া শিশুদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর এই সাহিত্যকর্মগুলি বাংলা সাহিত্যে শিশুসাহিত্য হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সৃষ্ট অন্যতম জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ভাদু মশাই। তাঁর লেখা রহস্য কাহিনীগুলির মধ্যে ‘লকারের চাবি,’ ‘একটি হত্যার অন্তরালে,’ ‘রাত তখন তিনটে’ বিশেষভাবে প্রশংসিত। রহস্যময় ঘটনা আর গোয়েন্দা গল্পের চমৎকার মেলবন্ধন এসব রচনায় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: নাট্যকার মধুসূদন দত্ত জীবনী রচনা
পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলা সাহিত্যের অবদানের জন্য নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৭৪ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর লেখা উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থটি এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাননা লাভ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়াও একে একে তিনি 'উল্টোরথ', 'তারাশংকর স্মৃতি', 'আনন্দ শিরোমণি' পুরস্কার পান।
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষা সাজেশন 2025
উপসংহার: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখনীতে মানবতার প্রতি এক গভীর বিশ্বাস প্রকাশ পায়। তাঁর মতে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস, আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি মানবতার প্রেমে মগ্ন থাকতেন। ২০১৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তিনি ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। "জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কথা কবে” – এই অমোঘ বাণীকে সত্য করে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, তবে তাঁর লেখা আমাদের হৃদয়ে চিরজীবন অমর হয়ে থাকবে।
২০২৪ সালে, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হল, বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর লেখা আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, যা যুগের পর যুগ ধরে আমাদের মধ্যে মানবিকতার শিখা প্রজ্বলিত করবে।
সবশেষে, আশা করছি জীবনী রচনাটি তোমাদের ভালো লাগবে, অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না। এরকম আরও পোস্ট পেতে নিয়মিত ভিজিট করো ধারণা এর মধ্যে আথবা আমাদের সাথে জুড়ে থেকো।