শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা
আজকের পোস্টে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনাটি শেয়ার করলাম। যেটি অনেকাংশে এবছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রবন্ধ রচনাটি খাতায় টুকে নিবে। পরীক্ষায় প্রবন্ধ রচনা থেকে ১০ মার্কস থাকে, সঠিক ভাবে এবং যথাযথ ভাবে লিখলে ৮ থেকে ৯ মার্কস পেয়া যাওয়া যায়।
শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
জাতীয় বিকাশ ও উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষাই সোপান দেশের উন্নতির-তা সে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক, যাই-হোক-না কেন। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ অতিমারির কারণে আরও অনেক কিছুর মতোই ব্যাহত হয়েছে শিক্ষণ-শিখন ব্যবস্থা। স্কুল, কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই একটানা বন্ধ থাকার দরুন শিক্ষার গতি অবরুদ্ধ হয়েছে যারপরনাই। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার বিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকাই অনেকাংশে অব্যাহত রয়েছে।
অতিমারির আগেও শিক্ষায় গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বস্তুত, প্রযুক্তির অবিরাম উন্নতির সঙ্গে সঙ্গো আমাদের সতত পরিবর্তনশীল জীবনযাপনের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থাতেও চলতে থাকে নিরন্তর রদবদল। "More education to more people in less time"-আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতার এই মন্ত্র বাস্তবায়িত করার অন্যতম পন্থা হল গণমাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষা প্রদান। শিক্ষাব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্যই হল শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতিকে আরও চিত্তকর্ষক, সময় সাশ্রয়কারী ও যুগোপযোগী করে তোলে। করোনার ফলে শিক্ষার বিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় গণমাধ্যমগুলি হল-সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, ইনটারনেট প্রভৃতি। এগুলিকে প্রকরণগতভাবে শিক্ষার পরোক্ষ মাধ্যম বলা হয়।
প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়া একটি অত্যন্ত সুঅভ্যাস, যার বিশেষ শিক্ষাগত মূল্য রয়েছে। সারা বিশ্বের তথ্যের ভাণ্ডার এটি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে কোথায় কী ঘটছে, কী ঘটবে-সব কিছুর খোঁজখবর পাওয়া যায় সংবাদপত্র থেকে। সাধারণ জ্ঞান ও শব্দভাণ্ডার বাড়ানোর ব্যাপারেও সংবাদপত্র প্রভূত সাহায্য করে। সম্পাদকীয়, বিশেষ রচনাগুলি শুধু বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের নিজস্ব ধ্যানধারণা গড়তেই সাহায্য করে না, ভাষার উপর দখল তৈরি করতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
আরও পড়ুন: বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা
শিক্ষার বিস্তারে বেতার বা রেডিয়োর ভূমিকাও যথেষ্ট। প্রাথমিকভাবে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বেতারের প্রয়োগ শিক্ষণ প্রণালীতে শুরু হয় ১৯৩০-এর দশক থেকে। সারা বিশ্বের খবরাখবর সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়ার আগেই বেতারে সম্প্রচারিত হয়। যাঁরা লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরাও রেডিয়োর মাধ্যমে নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যাঁরা চোখে দেখেন না, তাঁদের মধ্যেও শিক্ষাবিস্তারের এক আদর্শ মাধ্যম বেতার। বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত শিক্ষানুষ্ঠানগুলি ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি ও চিন্তাশক্তি বাড়ায়, তাদের কল্পনাশক্তি ও নীতিবোধকে উজ্জীবিত করে।
প্রায় এক শতকব্যাপী লোকরঞ্জক সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ্য চলচ্চিত্র শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। প্রচলিত শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির আওতায় না পড়লেও আধুনিক যুগের সবথেকে শক্তিশালী গণমাধ্যম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা যা শিখি, তা উপভোগ্যও হয় এবং তা আমাদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে যা আমরা সহজে ভুলি না।
বর্তমান সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যে গণমাধ্যমটির উপযোগিতা সবথেকে বেশি সেটি নিঃসন্দেহে ইনটারনেট। আজকের আধুনিক, গতিময় জীবনের এক আদর্শ সিস্টেম আর্কিটেকচার ইনটারনেট। ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন মুলুকে সূচনা হয় ইনটারনেটের। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশিসংখ্যক জনগণ ইনটারনেটের উপভোন্তায় পরিণত হয়। এর মধ্যে একটি বড়ো অংশ ছাত্রছাত্রীদের। দ্রুতগতিতে যে-কোনো বিষয়ে যাবতীয় তথ্যসংগ্রহ, বিভিন্ন পরীক্ষার পাঠক্রম, পরীক্ষার ফলাফল সবই এখন ছাত্রছাত্রীদের হাতের মুঠোয় ইনটারনেটের দৌলতে। ঘরে বসে, কম খরচে ই-এডুকেশন বা ই-লারনিং ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত লাভ করে ইনটারনেটের মাধ্যমেই। করোনায় বিপর্যস্ত সময়ে অনলাইন এডুকেশনকে সম্ভবপর করার পেছনেও ইনটারনেটের ভূমিকা প্রধান।
এছাড়াও ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড, শিক্ষামূলক সফটওয়্যার, ডিজিটাল সিমুলেশন, এবং অনলাইন শিক্ষামঞ্চের মতো মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি আধুনিক শিক্ষায় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রযুক্তিগুলি শিক্ষার্থীদের আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে, জটিল ধারণাগুলি সহজভাবে অনুধাবন করতে এবং বিভিন্ন শিক্ষণশৈলী ও পছন্দ অনুযায়ী শেখার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে।
এগুলো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ায় না, বরং একটি সমৃদ্ধ, ইন্টারেক্টিভ শিক্ষণ অভিজ্ঞতা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও সব কিছুর মতো গণমাধ্যমেরও আছে ভালো ও মন্দ দিক। বিশেষত চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও ইনটারনেটের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা এমন সব বিষয়ের বা ভিজুয়াল উপাদানের সম্মুখীন হতে পারে, যা তাদের সর্বাধিক বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।
অনেকসময় গণমাধ্যমগুলির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর ভুল ধ্যানধারণার জন্ম দেয়। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা যাতে সঠিক দিশা অবলম্বন করতে পারে, তার জন্য গণমাধ্যমগুলির নিরপেক্ষ থাকা খুব জরুরি।
আরও পড়ুন: একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা
গণমাধ্যমের দ্বারা শিক্ষাবিস্তার আদতে জনকল্যাণই। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করে তোলার সুফল সমাজের সকল স্তরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে এবং তার শুভ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায়। সবদিক বিচারবিবেচনা করে বলা যায় যে, গণমাধ্যমকে শিক্ষাবিস্তারের কাজে ব্যবহার করার কাজটিকে সমস্ত স্তরে যদি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়, তাহলে তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এক যথাযথ আদর্শ পরিকাঠামো রচনা করবে।
সবশেষে, আজকের প্রবন্ধ রচনাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের জানাবে এবং যদি আরও অন্যকোন প্রবন্ধ রচনা এর প্রয়োজন হয়ে থাকে অবশ্যই আমাদের জানাবে। আমরা যথা সময়ে তোমাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব।