এইডস এর কারণ ও প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা

এইডস এর কারণ ও প্রতিকার রচনা pdf | এইডস এর লক্ষণ ও প্রতিকার
Photo of author

Published On:

আজকে আমি dharona.in এর মধ্যে তোমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করলাম। এই পোষ্টের মাধ্যমে মৃত্যু-ত্রাস এইডস প্রবন্ধ রচনা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই প্রবন্ধ রচনাটি বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জন্য সাহায্য করবে।

মৃত্যু-ত্রাস এইডস প্রবন্ধ রচনা

দিনে দিনে সমাজ যত উন্নত হচ্ছে, ততই তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের যৌনজীবনের জটিলতা। ইউরোপ- আমেরিকার অবস্থা শোচনীয়, যৌনরোগ সেইসব দেশে ক্রমবর্ধমান। ভারতবর্ষের চিত্রও ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ‘অ্যাকুয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম’ (Acquired Immuno Deficiency Syndrome) সংক্ষেপে ‘এইডস’ (AIDS) ইউরোপ-আমেরিকায় বহন করে এনেছে মৃত্যু-ত্রাস, তার করাল গ্রাস আজ ভারতবর্ষেও অতি দ্রুত বিস্তার করে চলেছে নিজের অশুভ প্রাধান্য।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা জর্জিয়ার Centre for Disease Control-এ ‘এইডস’ নামক প্রাণঘাতী ভয়ংকর রোগটি ধরা পড়েছিল। এই রোগের উৎপত্তি হয় ‘হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস’ (Human Immuno Deficiency Virus), সংক্ষেপে HIV নামক এক রেট্রো-ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করলে। এটি শরীরের প্রতিরোধ শক্তি হ্রাসকারী ভাইরাসজনিত একটি রোগ। তবে মানবদেহে HIV প্রবেশ করা মানেই এইডস হওয়া নয়, সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের দশ-বারো বছরের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষের শরীরে রোগের উপসর্গ দেখা দেয় এবং লক্ষণ ফুটে ওঠার এক-দেড় বছরের মধ্যে মানুষটি মারা যান।

এইডসের ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করে রক্তের এক বিশেষ ধরনের শ্বেতকণিকা ‘টি-লিম্ফোসাইট’, যা মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তার দেয়াল ফুটো করে ওই কোশের ভিতর ঢুকে পড়ে। ক্রমে তারা বংশবিস্তার শুরু করে, লক্ষ লক্ষ ভাইরাস বেড়ে ওঠে রক্তকোশের ভিতর এবং অবশেষে টি-লিম্ফোসাইট ফাটিয়ে বাইরে চলে এসে ভাইরাসগুলি নতুন টি-লিম্ফোসাইট আক্রমণ করে। ফলে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়, নতুন নতুন রোগের সংক্রমণ ঘটে এবং আপাত সুস্থ HIV আক্রান্ত মানুষটি বিবিধ রোগের শিকার হন। এইডস হলে দেহের ওজন কমে যায়। প্রথম দিকে শরীরের বিভিন্ন অংশে স্থায়ী রূপে লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রাতে ঘাম ও জ্বর হতে থাকে। অত্যধিক দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, কয়েক সপ্তাহ ধরে পেটের গণ্ডগোল, দ্রুত শ্বাসক্রিয়া, শুকনো কাশি, সারা গায়ে চুলকানি, চর্মরোগ, মুখের ভিতর ও জিভের উপর ছোটো ছোটো সাদা দাগ, এনকেফেলাইটিস, মেনিনজাইটিস, নিউরোপ্যাথি, মায়েলোপ্যাথি ইত্যাদি রোগের লক্ষণসমূহ ফুটে বেরোয় শরীরে। এইসব উপসর্গ কখনও এককভাবে, আবার কখনও একসঙ্গেও দেখা দিতে পারে।

এটিও পড়ুন :  মহাকাশ গবেষণায় ভারত প্রবন্ধ রচনা | মহাকাশ গবেষণায় ভারতের সাফল্য - প্রবন্ধ রচনা

এইডস মূলত রক্তবাহিত রোগ, তাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই HIV শরীরে প্রবেশ করেছে কিনা-এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এইডস রোগ নির্ণয় করার দুটি পদ্ধতি হল-এলিজা বা এলাইসা পদ্ধতি (Elisa technique-Enzyme Linked Innunosorbent Assaytechnique) অথবা হাইভা টেস্ট (Hiva Test)। আর-একটি পদ্ধতি হল ডিপস্টিক পদ্ধতি (Depstic Method)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এলিজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ভুল হলে পুনরায় যে রক্ত এইডস পজিটিভ, তা পরীক্ষা করে দেখা বাঞ্ছনীয় এবং ওয়েস্টার্ন ব্লট প্রথায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া একান্তই দরকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদম প্রাথমিক পর্বে বা অন্য কোনো কারণে এলিজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি ধরা নাও পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে সন্দেহজনক ব্যক্তির বারংবার রক্ত পরীক্ষা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাধারণত রক্ত পরীক্ষায়-TC, DC, ESR দ্বারা কোনো সংকেত জানা সম্ভব হয় না। ‘ডিপস্টিক পদ্ধতি’ এলিজা পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম খরচ ও সময়সাপেক্ষ। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে Programme for Appropriate Technology Health (PATH) এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল।

এইডস ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে এবং নারী-পুরুষের অবাধ সংসর্গের ফলে। এই রোগের ভাইরাস কুকুর, বেড়াল, খরগোশ, পাখি, মশা, মাছি, জল, বায়ু ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয় না। একই ঘরে অথবা বিছানায় শুয়ে থাকলেও এক ব্যক্তির থেকে অপর ব্যক্তির দেহে এই রোগের জীবাণু সংক্রমণ ঘটে না। একই গ্লাসে জলপান কিংবা একই থালায় খাবার খেয়ে এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রোগীর পোশাকে, ঘরের দরজায়, দরজা-জানলার হাতলে, ঘরের আসবাবপত্রে, টেলিফোন ইত্যাদিতে এর জীবাণু লেগে থাকে না। এমনকি, এইডস রোগাক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলেও সেই মৃত ব্যক্তিটির শরীরে এইডসের ভাইরাস কিছু সময় পরেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়; ফলে এহেন রোগাক্রান্ত মৃতদেহ থেকেও এইডস ছড়ানো সম্ভব নয়। এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে যে-কোনো ইনজেকশন নেওয়ার সময় একবার মাত্র ব্যবহারোপযোগী (Disposable) সিরিঞ্জ বা ছুঁচ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। রক্ত নেওয়ার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত-HIV দূষিত রক্ত বা রক্তজাত ওষুধ গ্রহণকালে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। মায়ের শরীরে এইডস থাকলে গর্ভস্থ সন্তানেরও এইডস হয়। শিরার মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীরাও এই রোগের শিকার হতে পারেন। কান খুশকি, আকুপাংচারের ছুঁচ, উল্কি, নাপিতের অপরিশোধিত ক্ষুর বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি থেকেও এইডস ছড়াতে পারে। এ ছাড়াও এইডস আক্রান্ত রোগীর লালা থেকেও এইডস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে অত্যন্ত প্রবলভাবে।

এটিও পড়ুন :  প্রবন্ধ রচনা - একটি গাছ একটি প্রাণ | একটি গাছ একটি প্রাণ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বস্তুতপক্ষে, এই কালান্তক রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। কিছু ওষুধ আছে, যেমন- জাইডোভুডিন (Zidovudine), ডিদারোসিন (Didarosine) ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (Bonemarrow Transplantation), যা অনেক সময় কিছু পরিমাণ সুফল দিয়ে থাকে। আসলে এইডস ভাইরাস ঘন ঘন তার গঠন ও প্রকৃতি বদলায়, ফলে আজ যে ভাইরাস দিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়, পরে আর পরিবর্তিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে তার কার্যকারিতা থাকে না। তবে AZT, DDI/A, DDC জাতীয় নতুন ওষুধ এই ব্যাধির প্রকোপ কমায় ও রোগের জটিলতা বৃদ্ধিকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু সংক্রামিত ব্যক্তিকে বাঁচানোর উপযোগী কোনো চিকিৎসাই এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। আশার কথা ইতোমধ্যে Aids Collaborating Centre at the United Kingdom’s National Institute for Biology Standards-এর প্রধান জিম স্টট Simian Immuno Defi- ciency Virus (Siv Virus)-এর টিকা (Vaccine) আবিষ্কার করেছেন। যেহেতু এইডস ভাইরাসের সঙ্গে Siv Virus-এর প্রচুর গঠনগত সাদৃশ্য রয়েছে, সেহেতু আশা করা যায় যে এইডসের টিকা আবিষ্কার হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। তবে এই মুহূর্তে এই প্রাণঘাতী রোগটিকে এড়ানোর একমাত্র কার্যকারী উপায় হল সতর্কতা, সাবধানতা ও শিক্ষা।

যেভাবে সমগ্র বিশ্বে দিন দিন এইডস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, অচিরেই এই রোগ মহামারির আকার ধারণ করবে। ভারতবর্ষেও এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পশ্চিমবঙ্গে এইডস রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির হার অত্যন্ত দ্রুত, যদিও প্রকৃত সমীক্ষার অভাবে রোগীর সংখ্যার যথার্থ হিসাব এই রাজ্যে পাওয়া যায় না। সামাজিক বয়কটের শঙ্কায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে রোগীদের পরিচয় যেমন গোপন থাকে, তেমনি এইডস রোগী চিহ্নিতকরণের কোনো আইনও নেই; আর এর ফলে অজান্তে এইডস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থেকে যায় সদাসর্বদা। এক্ষেত্রে এই সমস্যা মোকাবিলার একমাত্র সম্ভাব্য পন্থাটি হল রোগী, চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ সকলের মধ্যেই সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।

এটিও পড়ুন :  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী pdf |ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী রচনা PDF
About the Author

Admin