পশ্চিমবঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পরেই পলিটেকনিক এবং আইটিআই কোর্স করার জন্য এগিয়ে আসে, কিন্তু তাদের মনে প্রায়শই প্রশ্ন থেকেই যায় এর পর কি? আজকের প্রতিবেদনে, আমরা পলিটেকনিক এবং আইটিআই কোর্সের পরবর্তী সম্ভাব্য ক্যারিয়ার বিকল্প, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, চাকরির ক্ষেত্র, স্বনিযুক্তি এবং শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পলিটেকনিক ও আইটিআই: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
পলিটেকনিক হল তিন বছরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা কোর্স। এই কোর্সে সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, কেমিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদি বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পলিটেকনিক কোর্সে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৫% নম্বর প্রয়োজন। এই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে, যা তাদের কর্মজীবনে সহায়তা করে।
আইটিআই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) কোর্সগুলির মেয়াদ ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে, যা ট্রেডের উপর নির্ভর করে। আইটিআই কোর্সে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পাস প্রয়োজন হয়। এই কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, ফিটার, স্টেনোগ্রাফি ইত্যাদি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
After Polytechnic & ITI: উচ্চশিক্ষার সুযোগ
১. বি.টেক (ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি): পলিটেকনিক ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা ল্যাটারাল এন্ট্রি মাধ্যমে সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে বি.টেক কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এটি তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং উচ্চতর পদে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই সুযোগ উপলব্ধ।
২. বি.ভোক (ব্যাচেলর অফ ভোকেশন): আইটিআই স্নাতকরা বি.ভোক কোর্সে ভর্তি হয়ে তাদের দক্ষতা ও শিল্প অভিজ্ঞতা বাড়াতে পারেন। এই কোর্সগুলি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপলব্ধ এবং শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষার উপর জোর দেয়।
After Polytechnic & ITI চাকরির সুযোগ
সরকারি খাতে পলিটেকনিক এবং আইটিআই স্নাতকদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় চাকরির সুযোগ রয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে, BSNL, BHL, GAIL, ONGC, DRDO, এবং অন্যান্য পাবলিক সেক্টর ইউনিট (পিএসইউ) নিয়মিতভাবে ডিপ্লোমা হোল্ডারদের নিয়োগ করে। পদগুলি সাধারণত জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান, মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ান, ফিটার ইত্যাদি। এই চাকরিগুলি স্থায়িত্ব ও ভালো বেতনের জন্য পরিচিত।
আরও পড়ুন: 12th পাশে ভারতীয় রেলে কি কি চাকরি আছে? পদ, পরীক্ষার প্যাটার্ন, যোগ্যতা – সমস্থ তথ্য দেখে নিন
বেসরকারি খাতে, পলিটেকনিক এবং আইটিআই স্নাতকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন, যেমন নির্মাণ, উৎপাদন, তথ্য প্রযুক্তি, এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রে। জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আইটি অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সাইট সুপারভাইজার ইত্যাদি পদে বেসরকারি হিসাবে চাকরি হয়ে থাকে। বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ বেশি হলেও প্রতিযোগিতাও তীব্র। তবে, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এখানে দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বনিযুক্তি ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
আইটিআই এবং পলিটেকনিক স্নাতকরা তাদের অর্জিত দক্ষতা ব্যবহার করে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্ক, প্লাম্বিং, ওয়েল্ডিং, মোবাইল মেরামত ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছোট উদ্যোগ শুরু করা সম্ভব। এছাড়া, তারা বিভিন্ন প্রকল্পে কন্ট্রাক্টর হিসেবেও কাজ করতে পারেন। স্বনিযুক্তি তাদের স্বাধীনতা ও আয়ের সুযোগ প্রদান করে, তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও বাজার বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ISRO Free Python Machine Learning Course: বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট পাওয়ার সুযোগ!
শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ
আইটিআই স্নাতকরা বিভিন্ন শিল্পে শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ (অ্যাপ্রেন্টিসশিপ) গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও শিল্প অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি তাদের কর্মজীবনে আরও উন্নতির সুযোগ দেয় এবং স্থায়ী চাকরির পথে সহায়তা করে। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষানবিশদের পরবর্তীতে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করে, যদি তারা প্রশিক্ষণকালীন সময়ে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন।
পরিশেষে বলি, এই ছিল পলিটেকনিক এবং আইটিআই কোর্স এর বিভিন্ন চাকরির সুযোগ এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ। আসা করছি পোস্টটি তোমাদের সহায়তা করবে। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবে। এরকম নিত্যনতুন বিষয় জানতে আমাদের নিয়মিত ফলো করুন।