মরু ক্ষয়চক্র সম্পর্কে ডেভিসের ধারণা ব্যাখ্যা করো। অথবা, মরু ক্ষয়চক্রের বিবরণ দাও।

Cycle of erosion by William Morris Davis | মরু ক্ষয়চক্র সম্পর্কে ডেভিসের ধারণা ব্যাখ্যা করো। অথবা, মরু ক্ষয়চক্রের বিবরণ দাও।
Photo of author
Bishal Roy

Published On:

মরু ক্ষয়চক্র উইলিয়াম মরিস ডেভিস সর্বপ্রথম মরু অঞ্চলে পর্যায়ক্রমিক ভূমিরূপ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেন। তাঁর মতে, মরু অঞ্চলের ভূমিরূপ আবহবিকার, প্রবহমান জলধারা ও বায়ুপ্রবাহের মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবহমান জলধারা মরু অঞ্চলের ভূমিরূপ বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। পরবর্তী পর্যায়ে উচ্চতা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত যখন কমে আসে তখন বায়ু মরু অঞ্চলের ভূমিরূপ বিবর্তনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলের স্কয়চক্রটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।

(১) যৌবন পর্যায়: মরু অঞ্চলে জলপ্রবাহজনিত ক্ষয়কার্যের মধ্য দিয়ে যৌবন অবস্থার সূচনা হয়। এই অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ভূমিরূপের যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় সেগুলি হল-ভূমির প্রারম্ভিক উত্থানে কতকগুলি পর্বতবেষ্টিত অববাহিকার সৃষ্টি হয়। এগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী সৃষ্টি হয়।প্রত্যেক অববাহিকার তলদেশ সেই অঞ্চলের ক্ষয়ের শেষ সীমা হিসেবে কাজ করে।মরু অঞ্চলে বাষ্পীভবনের মাত্রা অত্যধিক হওয়ায় পৃষ্ঠপ্রবাহ কমে যায়।ক্ষয়কার্যের প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষণস্থায়ী অনুগামী নদী পর্বতের ঢালে ‘v’ আকৃতির উপত্যকা গঠন করে।ক্ষয়িত পদার্থসমূহ পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে এসে উপত্যকার সামনে পলল শঙ্কু গঠন করে। অধিকাংশ নদীই পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে এসে পলল শঙ্কুতে হারিয়ে যায়।উপত্যকার তলদেশে চুঁইয়ে আসা জল সঞ্চিত হয়ে স্নায়া হ্রদ গঠিত হয়। নদীগুলি হ্রদ পর্যন্ত প্রবাহিত হলে নদী-বাহিত পলি প্লায়ার মধ্যে সঞ্চিত হয়। অস্থায়ী হ্রদগুলি শুকিয়ে গেলে লবণ সঞ্চিত হয়।অববাহিকায় আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু বিরাজ করলে হ্রদে পর্যায়ক্রমে পলি ও লবণ সঞ্চিত হয়।অববাহিকার উচ্চতা হ্রাসের সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলে, বায়ুর কার্য সক্রিয় হয়ে ওঠে।প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে বালি ও নুড়ির আঘাতে ক্ষয়কার্য শুরু হয় এবং প্লায়ার জল বাষ্পীভূত হলে বায়ুর অবনমন প্রক্রিয়ায় বায়ু-তাড়িত হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। তবে হ্রদে লবণের স্বর মোটা হলে সহজে এইরূপ গর্ত সৃষ্টি হতে পারে না।বায়ুবাহিত বালুকারাশি অববাহিকার যেখানে-সেখানে বালিয়াডি গঠন করে।স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের যৌবন অবস্থায় ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্রে উচ্চভূমির ক্ষয় এবং উপত্যকা ভরাটের মাধ্যমে আপেক্ষিক উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্ষয়চক্রের অগ্রগতির সাথে উচ্চতা হ্রাস পায়।

এটিও পড়ুন :  শ্রীলঙ্কায় চা-এর চাষ সম্বন্ধে আলোচনা করো।

(২) পরিণত পর্যায়: বৃষ্টিপাতের অভাবে বায়ুর কার্য বেশি সক্রিয় হলে পরিণত পর্যায় শুরু হয়। ভূমির উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভীষণভাবে কমে যায় বলে, এই পর্যায়ের প্রথম ভাগেই জলপ্রবাহের দ্বারা নগ্নীভবন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষয়চক্রের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই বায়ু সক্রিয় থাকলেও পরিণত পর্যায়ে এটিপ্রাধান্য বিস্তার করে। এই পর্যায়ে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বৈশিষ্ট্য-ক্ষয়ের মাধ্যমে পর্বর্তটালের পশ্চাদপসরণ ঘটে। এই পর্যায়ে জলবিভাজিকা ভীষণ তীক্ষ হয়। এদের মধ্যবর্তী উপত্যকাগুলি প্রশস্ত হয় এবং উপত্যকা ভরাট হয়ে উঁচু হতে থাকে।পর্বত ঢালের পশ্চাদপসরণের ফলে এর সম্মুখে এক বিস্তৃত সমভূমি সৃষ্টি হয় যা দুটি অংশে বিভক্ত। ঢালের নিম্নাংশে পর্বত বিধৌত নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে বাজাদা বলে। বাজাদার শেষপ্রান্ত পলি ও লবণ দ্বারা আবৃত থাকে। পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সমভূমির উর্ধ্বাংশ পেডিমেন্ট নামে পরিচিত। এই শিলা-কর্তিত সমভূমি পাতলা পলির স্তর দ্বারা আবৃত থাকতে পারে অথবাআবরণহীনও হতে পারে।এই পর্যায়ে নদীগুলির একসঙ্গে সংযুক্তকরণের ফলে এই অঞ্চলের একটি মাত্র স্কয়সীমা সমগ্র অঞ্চলটির ক্ষয়কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে।পর্বতংগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে, এগুলিকে ইনসেলবার্জ বলে।

(৩) বার্ধক্য পর্যায়: ভূমিরূপ বিবর্তনে জলের কাজ যখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে কেবল বায়ুর কাজ চলতে থাকে, তখন থেকে বার্ধক্য পর্যায় শুরু হয়। এই পর্যায়ে ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য-এই পর্যায়ের শেষদিকে উচ্চভূমি খুব বেশি মাত্রায় নগ্ন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো স্থানে স্কয়প্রতিরোধী শিলা পেডিমেন্ট ও বাজাদার মাঝে অবস্থান করে। একে ইনসেলবার্জ বলে। বায়ুতাড়িত গর্ত ও বালিয়াড়ির সংখ্যা এই পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি হয়।প্লায়ার সমস্ত পলি বায়ুর দ্বারা অন্যত্র স্থানান্তরিত হযে লোয়েস ভূমি গঠন করে।ক্ষয়িত পদার্থসমূহ স্থানান্তরিত হলে মরু সমভূমির উচ্চতা প্রারম্ভিক উচ্চতা অপেক্ষা অনেক কম হয়।মরু অঞ্চলে ভৌমজলস্তরই ভূমিক্ষয়ের শেষ সীমাকে নির্দেশ করে।সবশেষে পাতলা আবরণযুক্ত শিলাময় সমপ্রায় ভূমি গঠিত হয়। একে পেডিয়েন বলে। এ অবস্থা চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না নতুন ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়।সমালোচনা: ডেভিসের মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের ধারণাটি কেবলমাত্র পর্বতবেষ্টিত মরু অঞ্চলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পৃথিবীরঅন্যান্য মরু অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই কারণে ডেভিদের শুষ্ক অঞ্চলের ক্ষয়চক্র মতবাদটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়।

এটিও পড়ুন :  সম্পদ সৃষ্টির উপাদানসমূহ – Resource Creating Factors

Leave a Comment