আজকের পোস্ট এর মধ্যে একটি বিশেষ টপিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেটি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়তা করতে পারে। আজকের পোস্টে মহাকাশ গবেষণায় ভারত প্রবন্ধ রচনা টি শেয়ার করা হয়েছে যেটি বিশেষ ভাবে সহায়তা করতে পারে। অতএব শীঘ্রই পরে ফেলুন আথবা প্রয়োজনে সংগ্রহ করে রাখুন।
মহাকাশ গবেষণায় ভারত প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা: ১৯৭৫ এর ১৯শে এপ্রিল ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্রকে মহাকাশে সফল উৎক্ষেপণ করার পর থেকে আমেরিকা, পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার পর চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় একটি শক্তিধর দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। এখন দেখা যাক বর্তমানে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের স্থান কোথায়।
প্রাচীনকালে ভারতের মহাকাশ চর্চা: প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে মহাকাশ চর্চা প্রচলিত ছিল। পঞ্চম শতকে আর্যভট্ট, ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভাস্কর ও বরাহমিহির গ্রহনক্ষত্র নিয়ে নির্ভরযোগ্য গণনা করেছেন। পরে বিভিন্ন বিদেশি শাসনের কালে ভারতের মহাকাশ গবেষণায় শৈথিল্য দেখা দেয়।
আধুনিক যুগে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা: দীর্ঘ বিদেশি শাসনের অবসানে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতের প্রবেশ ১৯৬২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি। তারপর থেকে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বর্তমানে ভারতের মহাকাশ গবেষণার দায়িত্ব রয়েছে ‘দি ডিপার্টমেন্ট অব স্পেস অ্যান্ড দি স্পেস কমিশন’-এর ওপর।
ভারতের বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলি: মহাকাশ গবেষণার জন্য ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের নিকটবর্তী থুম্বা, আমেদাবাদ, অস্ত্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা ইত্যাদি জায়গায় একাধিক রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে।
মহাকাশে প্রেরিত ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহগুলি: ১৯৭৫-এ ‘আর্যভট্ট’ প্রেরণের পর থেকে ‘রোহিণী’ ‘রোহিণী-১’ ‘ভাস্কর’, ‘অ্যাপোলো’, ‘ভাস্কর-১’, ‘রোহিণী-ভি এ’, ‘ইনস্যাট’ ইত্যাদি প্রায় ১১০০ কৃত্রিম উপগ্রহ ভারত এ পর্যন্ত মহকাশে পাঠিয়েছে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ মহাকাশ অভিযানে ভারতের প্রথম মহাকাশচারী ব্যক্তি হলেন রাকেশ শর্মা।
কৃত্রিম উপগ্রহ মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন পরিষেবা : এরপর ২০০৪-০৫-এ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। ঐ সময়ে GSLV-FOI (Geosynchronous Satellite Launch Vehicle) দিয়ে ১৯৫০ কেজি ওজনের এক কৃত্রিম উপগ্রহকে ভিন্নতর কক্ষপথে পাঠানো সম্ভব হয়। এর দ্বারা টেলি যোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ, আবহাওয়া জনিত বিপদের সতর্কবার্তা, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্যের সহায়তা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
ভারতের চন্দ্রাভিযান ও মঙ্গলাভিযান: ২২ অক্টোবর ২০০৮ তারিখটি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান, গবেষণা ও অভিযানের ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে পরিগণিত হবে। ঐ দিন ভোর ৬টা ২২ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে যে ‘চন্দ্রায়ণ-১’ নামে যে চন্দ্রাভিযান PSLV-CII রকেটের সাহায্যে শুরু হয় তা ১৪ নভেম্বর চন্দ্রের বুকে সফল ভাবে অবতরণ করে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের সাফল্যকে এক নতুন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে।
এরপর ভারত ০৪/১১/১৩ মঙ্গল গ্রহের জন্য তথ্যানুসন্ধানী রকেট প্রেরণ করেছে। এটি প্রায় ১০ মাস ধরে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর গত ২৪/০৯/১৪ মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে সফলভাবে সেখানে ‘মঙ্গলময়’ নামে পরীক্ষণ কেন্দ্রটি নামিয়েছে। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের এটি একটি অন্যতম চূড়ান্ত সাফল্য। যেটি এখন মঙ্গলগ্রহ থেকে নিয়মিত ছবি ও তথ্য প্রেরণ করে চলেছে।
এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন: তবে আমাদের এখনই কোনো সন্তুষ্টির অবকাশ নেই। মহাকাশে প্রেরিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যাবলির সাহায্যে গভীর সমুদ্রের অজানা রহস্য, তুষারাবৃত পর্বতের বরফের পরিমাণ, হিমবাহের গতিপথ, জলবায়ু সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে মানুষের সুবিধা নির্দেশ করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবেই মহাকাশ গবেষণার অন্যতম সার্থকতা।
সাম্প্রতিক সাফল্য: আদিত্য-L1 মিশন: আদিত্য-L1 মিশনটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা 2023 সালের 2 শরা সেপ্টেম্বর ISRO দ্বারা সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। আদিত্য-L1 মিশনের মূল লক্ষ্য সূর্যের বহিরাবরণ (ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা) অধ্যয়ন করা এবং সোলার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও করোনাল ম্যাস ইজেকশন (CME) এর মতো ঘটনার উৎস বোঝা। পৃথিবী থেকে 1.5 মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের Lagrange Point 1 (L1) থেকে আদিত্য-L1 সূর্যের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ করবে।
আদিত্য-L1 মিশনে সাতটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে VELC (করোনা পর্যবেক্ষণের জন্য), SUIT (সূর্যের ছবি তোলার জন্য), এবং ASPEX (সূর্য বায়ুর কণা বিশ্লেষণের জন্য)। এই মিশনটি এখনও চলছে এবং এটি প্রায় 5 বছরের মিশন যার মধ্যে মাত্র 1 বছর সম্পূর্ণ হয়েছে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা: ISRO ক্রমাগত নতুন নতুন লক্ষ্য স্থাপন করছে। ‘গগনযান’ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো মানুষকে মহাকাশে প্রেরণের পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে ভারতের আরও উচ্চাভিলাষী প্রকল্প রয়েছে, যেমন ‘আদিত্য এল-১’ মিশন (বর্তমানে চলছে) এবং ‘মঙ্গলায়ন-২’।
উপসংহার: যদিও ভারত ইতিমধ্যেই মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে মর্যাদাসূচক অবস্থানে অধিষ্ঠিত, তবুও আমেরিকা ও সোভিয়েত দেশের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। অবশ্য এর কারণ আমাদের আর্থিক সংকট। তবে জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মত এই মহাকাশ গবেষণার অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাহলে হয়তো একদিন দেখা যাবে ভারতের মহাকাশ অভিযানের সাফল্য ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও লাভজনক অবদান রাখতে পারবে। আমরা সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
মনে রাখবেন:
এই প্রবন্ধ রচনাটি আরও কিছু বিকল্পে লেখা যেতে পারে, যেমন –
- মহাকাশ গবেষণায় ভারতের সাফল্য
- মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অবদান