ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী pdf |ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী রচনা PDF

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী pdf | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী রচনা | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী - Ishwar Chandra Vidyasagar | pdf
Photo of author

Published On:

আজকের পোস্টে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী (pdf) তুলে ধরা হল যেটি তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু!”

ভূমিকা: বাংলার নবজাগরণের পথিকৃত, বাঙালির মন ও মননের প্রাণময় মহাপুরুষ করুণার সিন্ধু, বিদ্যাভারতীর আঙিনায় সর্বোত্তম মহানায়ক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মানবধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূজারী, নতুনতম জীবনবাদের ও নবতম বলিষ্ঠতার মূর্ত প্রতীক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-যাঁর মতো এমন নানা গুণের অধিকারী মানুষ তৎকালীন সময়ে আর ছিল। না বললেই চলে। সুগভীর পান্ডিত্য, লৌহ-কঠিন চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিরলস কর্মসাধনা আর বজ্রজয়ী বনস্পতির মতো অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী মহাপুরুষ আমাদের প্রাতঃস্মরণীয়।

জীবনকথা:

‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিখ্যাত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা ভগবতী দেবী। তাঁর বাল্যশিক্ষা অতিবাহিত হয় গ্রামের পাঠশালায়, পরবর্তীকালে কলকাতায় এসে ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজে। চরমতম দারিদ্র্য আর অনমনীয় মনোবল ছিল তাঁর ছাত্রজীবনের একমাত্র অবলম্বন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাত্র বারো বছর বয়সেই সংস্কৃত, সাহিত্য, ব্যাকরণ, ন্যায়, স্মৃতি, অলংকার, বেদান্ত প্রভৃতি নানা বিষয়ে সুগভীর পান্ডিত্য লাভ করেন। চরমতম প্রতিকূলতাকে অদম্য মনোবলের সাহায্যে পরাভূত করে একের পর এক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান দখল করেন। আপন হাতে যাঁকে দুবেলা রান্না করে ও ঘর-সংসারের যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম সামলে পড়াশুনা করতে হত, যিনি পিতাঠাকুরের হাত ধরে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়, অর্থাভাবে যাঁকে রাস্তার গ্যাসের বাতির নীচে পড়াশোনা করতে হত সেই ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় পণ্ডিতসমাজ প্রদত্ত ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সর্বকালের সর্বদেশের ইতিহাসে এ এক অনন্য নজির।

এটিও পড়ুন :  বিজ্ঞানের জয়যাত্রা - প্রবন্ধ রচনা

কর্মজীবন:

ছাত্রজীবন শেষ করে বিদ্যাসাগর-এর কর্মজীবনের প্রথম পদক্ষেপ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা। পরবর্তীকালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। বিশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শকরূপে তিনি অনেকদিন নিযুক্ত ছিলেন এবং কর্মদক্ষতার পরিচয় দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গ্যে মতের অমিল হওয়ায় তিনি একই সলো দুটি পদ থেকে ইস্তফা দেন। বৃহত্তর জীবনের ডাকে সমাজসংস্কারের পথে এরপর তিনি এগিয়ে চলেন দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ে ও গভীর জীবনবোধে চালিত হয়ে।

সমাজসংস্কার:

“বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, কুলীনপ্রথার বর্বরোচিত দানবীয়তায় মেতেছিল যখন সমাজ, তখন সেই দানবীয়তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন যে দৃপ্ত পৌরুষ, তিনি-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।”

-কর্মজীবনের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যাসাগর নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন সমাজসংস্কারের সুবিপুল কর্মযজ্ঞে। বহুবিবাহ তখন সমাজের এক অসহনীয় অভিশাপ ছিল-সেই বহুবিবাহ রদে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৌলিন্যপ্রথার নিষ্ঠুরতায় বাল্যবিবাহ যখন সমাজের বুকে সৃষ্টি করেছিল এক অভাবনীয় পৈশাচিক পরিবেশ তখন বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ দমনে প্রয়াসী ভূমিকা নিয়েছিলেন।

তৎকালীন সমাজ ছিল অন্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন তাই বিধবাবিবাহের প্রচলন একেবারেই ছিল না-গভীর মানবিকতাবোধে উদ্দীপ্ত বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রচলন করেন, যার ফলে সমাজপতিদের অবর্ণনীয় ও অকথিত নির্যাতন তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল। প্রকৃত অর্থেই তিনি সংস্কারের আলোকশিখায় অন্ধ-সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বুকে জ্বালিয়েছিলেন জ্ঞানের প্রদীপ। স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। যে সমাজে স্ত্রীশিক্ষা ছিল নিষিদ্ধ সেই সমাজে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন বিদ্যাসাগরের জীবনে অবিস্মরণীয় কীর্তি। প্রকৃত অর্থেই বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কার আন্দোলন ভারতের বুকে সূচনা করেছিল নবযুগের।

সাহিত্যে অবদান:

বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার যথার্থ শিল্পী। বাংলা ভাষার উন্নতিসাধনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি বাংলা গদ্যভাষাকে সাবলীলতা দান করেছেন, বাংলা গদ্যের আদর্শ পথ প্রবর্তনের জন্যই তাঁকে ‘বাংলা গদ্যের জনক’ আখ্যা দেওয়া হয়। বহু বিদেশি গ্রন্থের ও সংস্কৃত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেছিলেন-তাঁর অনুবাদ এত প্রাণময় ও সাবলীল ছিল বলেই অনুবাদ গ্রন্থগুলিকেও মৌলিক গ্রন্থ বলে মনে হয়। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘বাংলার ইতিহাস’, ‘জীবনচরিত’, ‘কথামালা’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘আখ্যানমঞ্জুরী’ প্রভৃতি। শিশুশিক্ষার জন্য ‘বর্ণপরিচয়’ এবং বাল্যশিক্ষার জন্য ‘বোধোদয়’ তাঁর জীবনের অমর কীর্তি।

এটিও পড়ুন :  প্রবন্ধ রচনা - একটি গাছ একটি প্রাণ | একটি গাছ একটি প্রাণ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

“সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়
তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়।”

আরও পড়ুন: HS Writing Suggestion 2025

উপসংহার: উনবিংশ শতাব্দীর পরম বিস্ময় ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেন তৃণলতাগুল্মের ভিড়ে বজ্রজয়ী বনস্পতি, লক্ষ কোটি নক্ষত্রের মাঝে অনির্বাণ সূর্য। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই সাঁওতাল পরগনার কার্মাটাড় গ্রামে তাঁর মহাপ্রস্থান ঘটে। জাগতিক পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তাঁর কীর্তিতে তিনি চির-অম্লান। তাঁর আদর্শ আজও আমাদের পাথেয়।

About the Author

Admin