আমাদের দ্বিতীয় এন. ডি. এ. সরকারের নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১৫ই আগস্ট ২০১৪ তারিখে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর প্রথম ভাষণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। এই ঘোষিত প্রকল্পটি হল-‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য-ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনা। গত ১৮ই আগস্ট ‘১৪ থেকে এই প্রকল্পটি কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলেরই এই নতুন প্রকল্পটির সংগঠন, লক্ষ্য রা উদ্দেশ্য, ভালো-মন্দ ইত্যাদি সকল বিষয়ে পর্যালোচনা করা স্বাভাবিক।
প্রকল্পটির রূপরেখা
‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’ প্রকল্পটির সূচনা ১৮ই আগষ্ট ‘১৪। এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হল ভারতের প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজনকে কোনো জমা টাকা ছাড়াই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা প্রদান। এই অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো KYC ফর্ম জমা দেওয়ার দরকার নেই। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ডেবিট কার্ড, ১ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা ও ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রাপ্তি ইত্যাদির সুযোগ পাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য হল আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় দেশের অন্তত সাড়ে সাত কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০১৬ সালের ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে যাঁরা এই প্রকল্পাধীন হবেন তাঁদের প্রত্যেকেই ঐ ১ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা ও অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকার জীবনবিমার সুযোগ পাবেন। এখন এই ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’ প্রকল্পটির খুঁটিনাটি বিষয়ে পর্যালোচনা করা যাক।
জনধন যোজনাটির বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
১। ভারতের প্রত্যেকটি পরিবারের একজন ব্যক্তি ভারতের যে কোনো সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকে Zero Balance অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
২। যে কোনো বৈধ সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এক্ষেত্রে KYC অনেক শিথিল করা হয়েছে।
৩। নিরক্ষর ব্যক্তিও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তাঁরা টিপছাপ দিয়ে ব্যাংকে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।
৪। কোনো রকম সরকারি পরিচয়পত্র না থাকলেও গ্রাহক শুধু তার দু’টি ছবি দিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং তাঁরা পাশবই পাবেন।
৫। প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ‘Ru Pay’ ডেবিট কার্ড পাবেন, এটিকে টাকা তোলার জন্য ATM কার্ডের মত ব্যবহার করা যাবে।
৬। প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বিনা ব্যয়ে ১ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ বিমার সুযোগ পাবে। ২০১৫ সালের ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে যাঁরা এই প্রকল্পে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাঁরা বিনামূল্যে বাড়তি ত্রিশ হাজার টাকার জীবনবিমার সুযোগ পাবেন।
৭। যাঁরা কমপক্ষে ৬ মাস এই অ্যাকাউন্ট সঠিকভাবে লেনদেন করবেন, তাঁরা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে বছরে ১২ শতাংশ সুদে স্বল্প মেয়াদি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
৮। এই প্রকল্পাধীন অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না থাকলেও পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ওভার ড্রাফট করতে পারবেন। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা ফেরৎ দিতে হবে। ৯
৯। এই অ্যাকাউন্টের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল-এখানে কোনো গ্রাহককে চেক বই দেওয়া হবে না এবং জমার পরিমাণ কখনও ৫০ হাজার টাকার বেশি হতে পারবে না। তাছাড়া এতে সারা বছরে সেভিংস, রেকারিং এবং স্থায়ী আমানত সব মিলে মোট জমা ১ লক্ষ টাকার বেশি হতে পারবে না।
জনধন যোজনার সুবিধা
এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হল ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে দেশের সমগ্র পরিবারকে ব্যাংক পরিষেবার আওতায় আনা। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পাধীন গ্রাহক পরিবারগুলি রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা, ১০০ দিনের কর্মপ্রকল্পের টাকা বা অন্যান্য সরকারি সহায়ক ভাতা ইত্যাদি সকল প্রকার আর্থিক অনুদান তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পেয়ে যাচ্ছেন। এতে যেমন আর্থিক দুর্বল শ্রেণির মানুষের সুবিধা হয়েছে তেমনি দুনীর্তিরও অনেকখানি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং সর্বোপরি অতি সাধারণ মানুষকে ব্যাংকমুখী করা গেছে। এটি এই প্রকল্পের বড় ইতিবাচক দিক।
সবশেষে, এখন পর্যন্ত ‘প্রধানমন্ত্রী জনধনযোজনা’ প্রকল্পটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ কার্যকর হয়েছে বলে বোধ হয়। ভবিষ্যতে জনকল্যাণকামী এই Zero Balance A/c প্রকল্পটি সাধারণ মানুষকে আরও ব্যাংকমুখী করুক এবং এর মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি হোক এই আমাদের কামনা।