চন্দ্রযান ৩ প্রবন্ধ রচনা PDF | Chandrayaan 3 বাংলা প্রবন্ধ রচনা

চন্দ্রযান ৩ প্রবন্ধ রচনা PDF | Chandrayaan 3 বাংলা প্রবন্ধ রচনা | ভারতের চন্দ্র অভিযান রচনা pdf
Photo of author
Admin

Published On:

আজ তোমাদের সাথে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বিষয় চন্দ্র মিশন Chandrayaan 3 এর উপর একটি প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করব। এই প্রবন্ধ রচনাটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। অতএব দেড়ি না করে রচনাটি পরে নাও আথবা সংগ্রহ করে নাও।

[সূত্রাবলি: ভূমিকা – চন্দ্রাভিযানের ইতিহাস – ‘চন্দ্রযান-৩’ এর যাত্রার বিবরণ – ‘চন্দ্রযান-৩’ সম্পর্কে কিছু তথ্য – সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীগণ ও বঙ্গ সন্তানগণ – চন্দ্রপৃষ্ঠে ‘বিক্রম’ ও প্রজ্ঞানের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি – উপসংহার ]

প্রবন্ধ রচনা – চন্দ্রযান 3

ভূমিকা : ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে গত 23শে আগস্ট 2023 বুধবার এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিন। ঐদিন পূর্বনির্ধারিত কার্যক্রম অনুসারে ঠিক সন্ধ্যা 5টা 4 মিনিটে রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে কোলে নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। আপাত ভাবে শেষ হল 41 দিন ধরে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইন্ডিয়ান স্পেশ রিসার্চ অর্গানাইজেশন ‘ইসরো’ প্রেরিত ‘চন্দ্রযান-৩’ এর সফল অভিযান। সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় এই সফল চন্দ্রাভিযান নিঃসন্দেহে প্রতিটি ভারতীয়ের গর্ব উদ্রেক করে ও পর্যালোচনার দাবি রাখে।

এটিও পড়ুন :  শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

‘চন্দ্রযান-৩’-এর যাত্রার বিবরণ : বিগত 19 সালের ‘চন্দ্রযান-২’ এর ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে গত 14ই জুলাই 23 শুক্রবার ঠিক দুপুর 2টো 35 মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী হরিকোটা থেকে ভারতীয় ‘বাহুবলী’ রকেটের কাঁধে চেপে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল ‘চন্দ্রযান-৩’। গত 23শে আগস্ট 2023 ‘চন্দ্রযান-৩’-এর সফল অভিযানের শেষে তার পেটে রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে সঙ্গে করে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চন্দ্রপৃষ্ঠের শীতলতম দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসাবে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে পা রাখল।

অভিযানের আর্থিক ব্যয়: ‘চন্দ্রযান-৩’ মিশনের ব্যয় ছিল প্রায় 667 কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতের এই মহাকাশ অভিযানটির ব্যয় অনেক দেশের মহাকাশ মিশনের তুলনায় কম ছিল। এমনকি ভারতের বেশ কিছু বড় বাজেটের চলচ্চিত্রের চেয়েও কম খরচে সম্পন্ন হয় এই অভিযান। এর মাধ্যমে ইসরো প্রমাণ করেছে যে, সীমিত ব্যয়ে বড় মাপের প্রযুক্তিগত কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

‘চন্দ্রযান-৩’ সম্পর্কে কিছু তথ্য: ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-এর উদ্যোগে ‘চন্দ্রযান-৩’ সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলি যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক। যে GSLV রকেটের সাহায্যে চন্দ্রযানটি উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল তার নাম ‘বাহুবলী’। এটি গত ‘চন্দ্রযান-২’ এর সময়েও ব্যবহৃত হয়। এর উচ্চতা-18 তলা বাড়ির সমান এবং ওজন 640 টন। এই অভিযানে কোনো অববিটার স্যাটেলাইট নেই। রয়েছে প্রপালসান মডিউল, ল্যান্ডার রোভারের আয়ুষ্কাল ১ চন্দ্র দিবস অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে 14 দিন। সেই ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ গত 23শে আগস্ট 2023 রোভার ‘প্রজ্ঞান’ কে কোলে নিয়ে সফলভাবে অবতরণ করল চাঁদের দক্ষিণ মেরুর শীতলতম স্থানে। সফল চন্দ্রাভিযান হিসাবে ভারত হল চতুর্থ দেশ এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী হিসেবে প্রথম দেশ। ভারতবাসী হিসাবে যা গর্ব করার মত।

এটিও পড়ুন :  গঙ্গা দূষণ: সমস্যা ও প্রতিকার

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীগণ ও বঙ্গ সন্তানগণ: ‘চন্দ্রযান-৩’-এর সাফল্যের যে সমস্ত বিজ্ঞানী ও কলাকুশলীগণ অগ্রগণ্য তাঁদের কয়েকজনের নাম এখানে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে ইসরোর চেয়ারম্যান ‘চন্দ্রযান-৩’ বহনকারী ‘বাহুবলী’ রকেটের অন্যতম কারিগর শ্রীধর পানিকর সোমনাথ, চন্দ্রযানের সফল লঞ্চারের পুরোধা এস. উন্নিকৃষ্ণন নায়ার, ‘চন্দ্রযান-৩’ প্রজেক্টের ডিরেক্টর পি. ভিরামুথুভেল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কৃতী এম. শঙ্করণ, শ্রীমতী মুথাইয়া বনিতা, ডি. নারায়ণ, শ্রীমতী কল্পনা নন্দগোপালের নাম উল্লেখযোগ্য।

একই সঙ্গে এই উদ্যোগে কয়েকজন বঙ্গ সন্তানের নাম জড়িয়ে আছে। তাঁরা হলেন- বীরভূমের মল্লারপুরের বিজয় দাই, সিউড়ির সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের কৃশানু নন্দী, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার তুষারকান্তি দাস, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের অনুজ নন্দী, পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর কাটালের পীযূষকান্তি পট্টনায়ক ও জলপাইগুড়ির কৌশিক নাগ প্রমুখদের নাম উল্লেখযোগ্য। এঁরা সকলেই সহযোগী বিজ্ঞানী বা কারিগর হিসাবে এই ‘চন্দ্রযান-৩’ অভিযানে যুক্ত ছিলেন।

চন্দ্রপৃষ্ঠে ‘প্রজ্ঞান’-এর কর্মসূচি: ‘বিক্রম’ ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করার পর তার পেটের ভিতর থেকে বের হয়ে এল চন্দ্রপৃষ্ঠে পরিক্রমণকারী রোভার ‘প্রজ্ঞান’। যানটির ছয় চাকা, যাতে সে চাঁদের বন্ধুর পৃষ্ঠতলে সহজেই ঘোরাফেরা করতে পারে। এর ওজন মাত্র 27 কেজি। সৌরশক্তি চালিত। যদিও এর সঙ্গে ব্যাটারি যুক্ত আছে। এর কাজ হল চাঁদের দক্ষিণমেরুর এই চির অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশটিতে যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস 200 ডিগ্রি সেখানে কোনো জমাট তুষার ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধান করে তার ছবি ইসরোতে প্রেরণ করা। এই সব কাজগুলি ‘প্রজ্ঞান’ সঠিকভাবে করতে পারলে সেটা ভারতের কাছে এক বিরাট মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য গ্রহ গ্রহান্তর অভিযানের পথ সুগম করবে।

উপসংহার: ভারতের এই তৃতীয় চন্দ্রাভিযান ‘চন্দ্রযান-৩’ এর সাফল্য ভারতের একান্ত গর্বের বিষয়। পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে সেখানে আমাদের উপস্থিতি এবং পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আমাদের পদার্পণ উভয়ই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পথে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে আশা করা যায়। আমরা সেই আরও সমৃদ্ধ দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।

এটিও পড়ুন :  শতবর্ষে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচনা | Nirendranath Chakraborty Biography in Bengali