আবহাওয়া সঞ্চালন সম্পর্কে রসবি তরঙ্গ ও ওয়াকার সার্কুলেশন আলোচনা করো।

আবহাওয়া সঞ্চালন সম্পর্কে রসবি তরঙ্গ ও ওয়াকার সার্কুলেশন আলোচনা করো।
Photo of author
Bishal Roy

Published On:

রসবি তরঙ্গ: 1939-এর দশকে আবহাওয়াবিদ সি.জি. রসবি (C.G. Rossby) উর্ধ্বাকাশে তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার নামানুসারে এই তরঙ্গায়িত বায়ুর নাম হয় রসবি তরঙ্গ (Rossby Wave)। ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে প্রবাহিত দীর্ঘাকার তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহ যার দৈর্ঘ্য 5-6 হাজার কিলোমিটার, তাকে রসবি ওয়েভ বলে। রসবি তরঙ্গের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এগুলি হল-

  • জিওস্ট্রফিক বায়ুপ্রবাহের তরঙ্গায়িত প্রবাহই হল রসবি তরঙ্গ।
  • এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়
  • উর্ধউপোস্ফিয়ারে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
  • এই বায়ুর গতিবেগ সেকেন্ডে 100 মিটার।
  • এই বায়ুপ্রবাহের ফলে অনুভূমিক তাপ হ্রাস পায়। এর হার প্রতি কিলোমিটারে 2 °সে।

ওয়াকার সার্কুলেশন

প্রশান্ত মহাসাগরের ক্রান্তীয় অঞ্চলে যে সুবিশাল বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চলন কোশ পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত আছে, তাকেই ওয়াকার সার্কুলেশন বলে।1922 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জি. টি. ওয়াকারের নামানুসারে এর নাম হয় ‘ওয়াকার সার্কুলেশন’। তাই বায়ুপ্রবাহের একটি আঞ্চলিক পরিচলন কক্ষ যা মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর পূর্ব-পশ্চিমে চাপীয় ঢালের তারতম্যের ফলে সৃষ্টি হয়। দুই বা তিন বছর পরপর এই সাধারণ আবর্তন দিক পরিবর্তন করে, অর্থাৎ বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। এই পরিবর্তনকে ওয়াকার ‘দক্ষিণ দোলন’ বলে অভিহিত করেন।

সক্রিয় অবস্থা: ওয়াকার সার্কুলেশনের এই অবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে চারটি ওয়াকার কক্ষ (Walker Cell) গঠিত হয়। এর মধ্যে আমাজন অঞ্চল, মধ্য আফ্রিকা, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে গভীর নিম্নচাপ গঠিত হয় এবং এর ফলে বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। ওয়াকার সার্কুলেশনের এই অবস্থাতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক হয়। অন্যদিকে, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমভারত মহাসাগরের উপরিস্থিত বায়ুমণ্ডলে উচ্চচাপ গঠিত হওয়ায় এখানে বায়ু নিম্নমুখী হয় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়।

এটিও পড়ুন :  সম্পদের কার্যকারিতা তত্ত্ব ব্যাখ্যা করো।

নিষ্ক্রীয় অবস্থা: ওয়াকার সার্কুলেশনের এই অবস্থায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাঁচটি ওয়াকার কক্ষ গঠিত হয়। এর মধ্যে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরের উপরিস্থিত বায়ুমণ্ডলে নিন্মচাপ গঠিত হয়। বায়ু হালকা হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয় এবং প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু অপরদিকে আমাজন অববাহিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় উচ্চচাপ গঠিত হওয়ায় বায়ুর নিম্নমুখী প্রবাহ পরিলক্ষিত হয় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। এই সময় মৌসুমি বৃষ্টিপাত দুর্বল প্রকৃতির হয়।